ভোক্তা অধিকারে অভিযোগের বিস্তারিত নিয়মকানুন

লেখকঃ নাগিব মাহফুজ প্লাবন | তারিখঃ ৮ ডিসেম্বর ২০২০ | ১০৪১৭৮৬৩ বার পড়া হয়েছে

অনেকেই ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের নাম জানেন কিন্তু কাজ জানেন না। অনেকে আবার অনেক কিছুই জানেন, কিন্তু কিভাবে অভিযোগ করবেন তা না জানা থাকায় আগাতে পারেন না। আজ এসব নিয়েই পোস্ট।

ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত একটি অধিদপ্তর যা ২০০৯ সালে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন প্রণয়নের সাথে গঠিত হয়েছে। ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় বাংলাদেশের সাপেক্ষে নতুন অধিদপ্তরই বলা চলে। খুব তাড়াতাড়ি বিস্তৃতি লাভ করায় বর্তমানে সম্ভবত অনেক জেলাতেই এর অফিস হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই।

এতো গেলো অধিদপ্তরের কথা। শুধু তা জানলেই কি হবে ? জানা দরকার, ভোক্তা হিসেবে আপনার অধিকার কি কি ! অধিকার, আইন সব পাবেন এখানে।

এই আইনের ৪র্থ অধ্যায়ে ৩৭ থেকে ৫৬ ধারা অপরাধ ও দণ্ড ব্যাখ্যা করে যার সারঃসংক্ষেপ বলছিঃ

  • • পণ্যের মোড়ক, উৎপাদনের তারিখ, মেয়াদউত্তীর্ণের তারিখ ও নানাবিধ বর্ণনা না দেয়া থাকলে তা দণ্ডনীয় অপরাধ।
  • • দোকানে মূল্য তালিকা না থাকলে তা অপরাধ
  • • নির্ধারিত দামের থেকে অতিরিক্ত দাম রাখলে (যেটায় অনেকে ধরা খায়) তা অপরাধ
  • • ভেজাল মিশ্রিত করলে অপরাধ
  • • পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে অসত্য বা মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারিত করলে তা অপরাধ
  • • প্রতিশ্রুত পণ্য বিক্রয় বা সরবরাহ না করলে
  • • এছাড়াও মেয়াদউত্তীর্ণ পণ্য সহ আরও নানাবিধ অপরাধে শাস্তি আছে একটু দেখে নিবেন কষ্ট করে।

অনেক থিওরি বললাম, এবার প্র্যাকটিকাল 😛 অনেকেই হয়তো জানেন না, ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরে আর ইমেইলের মাধ্যমে কষ্টকর উপায়ে অভিযোগ করতে হয় না। এখন খুবই সহজভাবে করা যায়। আমি ২০১৬ ও ২০১৭ সালে ইমেইলে করতাম যা অনেক কষ্টসাধ্য এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার ছিলো, অনেক সময় প্রমাণ হাতে থাকা সত্ত্বেও করতে ইচ্ছা করতো না। যাই হোক, আসল কথায় আসি।

সবার আগে যেতে হবে একসেবার ওয়েবসাইটেঃ eksheba.gov.bd

উপরে নিবন্ধন বাটনে চাপ দিয়ে আবেদনকারী সিলেক্ট করতে হবে। এরপর নাম, মোবাইল নাম্বার দিলে ওটিপি আসবে। সেটা দিয়ে লগিন করতে হবে।

লগিন করার পর একটা পপ-আপে আপনাকে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বার বা জন্মসনদ নাম্বার দিতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করেছি আমি এক্ষেত্রে।এনআইডি সার্ভার থেকে যাবতীয় ব্যাসিক তথ্য নিলেও অনেক কিছুই আবার পূরণ করতে হবে। যা আপনি প্রোফাইলে গিয়ে পূরণ করতে পারবেন। প্রোফাইলে গিয়ে আগেই পূরন করে নিন, নিজের নাম, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা, বাবা-মার নাম, বউ থাকলে তার নাম, সংযুক্তি ট্যাবে গিয়ে অবশ্যই ছবি, সিগনেচার ও এনআইডি আপলোড করে দিবেন। অন্তত পক্ষে ছবি আর সিগনেচারটা। এর ফলে, আপনার আবেদনে, আপনার ছবি আর সিগনেচার অটোমেটিক চলে আসবে যা আপনার সময় বাঁচাবে।

এবার প্রোফাইলের কাজ শেষ হলে মূল ওয়েবসাইট ফিরে আসুন। সার্চ বাটনে ‘ভোক্তা’ লিখার সাথে সাথে নাম দেখাবে, তাতে ক্লিক করে ফর্মে চলে যান। এখানে দেখাবে আপনার দুটি ডকুমেন্ট প্রয়োজন এবং ৩০ কার্যদিবস সময় লাগবে সেবাটি পেতে। অ্যাপ্লাই করুন।

অভিযোগের বর্ণনার ঘরটি ছোট দেখালেও তাতে মনের যত ক্ষোভ আছে সব বর্ণনা করতে পারবেন, টেনশন নাই 😛 এবং আমার সাজেশন থাকবে যতটা সম্ভব ব্যাখ্যা করেই লিখবেন। সংযুক্তিতে অবশ্যই আপনি যে অর্ডার করেছেন তার একটি সংযুক্তি লাগবে আর অর্ডারের এখন কি অবস্থা (যদি না পেয়ে থাকেন) আর পেয়ে থাকলে, প্রোডাক্টের ছবি দিতে পারেন দ্বিতীয় সংযুক্তিতে।

সংযুক্তির ব্যাপারে বাধা-ধরা নিয়ম নেই। আপনি অর্ডার করেছেন তার একটি প্রমাণ এবং উক্ত পণ্যের ছবি বা পণ্য না পেয়ে থাকলে অর্ডারের বর্তমান অবস্থা এসব দেয়া যেতে পারে। আমি অতীতে ভয়েস কল, বিকাশ ট্রান্সেকশন স্ক্রিনশট, কার্ড দিয়ে পেমেন্টের স্ক্রিনশট এগুলাও দিতাম, এখন দেই না। আপনারা ইচ্ছা হলে দিতে পারেন।

সবশেষে আবেদন প্রেরণ করুন বাটনে চাপ দিয়ে অভিযোগ পাঠিয়ে দিন। পাঠানোর আগে শেষবারের মত ফাইনাল চেক করে নিবেন কোনো ভুল থাকলো কিনা। বিশেষ করে অভিযোগের বর্ণনার মধ্যে EVL নাম্বার থুক্কু ইনভয়েস নাম্বার 😛 কি প্রোডাক্ট অর্ডার করেছেন তার নাম, তারিখ, কত কার্যদিবস হয়েছে সেটা ব্যাখ্যা করবেন।

অবশ্যই কার্যদিবস দেখতে কোনো কষ্ট না করে karjodibos.com এ যাবেন, নিমেশেই দেখতে পাবেন।

কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আর হ্যাঁ, এই পোস্ট, যেকোনো জায়গায় শেয়ার/কপি করতে পারবেন। তবে, আমার নামটি দিয়ে দিলে খুবই খুশি হবো ❤